চিনা
চিনা, Photo: তোতা মিয়া এগ্রো |
ইংরেজি নামঃ Chinese Millet, Proso Millet, Common Millet
বৈজ্ঞানিক নামঃ Panicum miliaceum L.
আঞ্চলিক নামঃ খেরী
পরিবার: Poaceae
চিনা একটি অপ্রচলিত ফসল,
বর্তমানে পাখি'র খাবার হিসেবে জনপ্রিয় হলেও আগে এটি শুধুমাত্র মানুষের খাবার হিসেবেই
চাষ হতো। আগে এর প্রচুর পরিমানে চাষ লক্ষ করা যেতো কিন্তু বর্তমানে সেচ ব্যবস্থার উন্নয়নের
ফলে এর চাষ ক্রমান্বয়ে সংকুচিত হচ্ছে। বর্তমান প্রজন্মের অনেকেই চিনা না চিনলেও এক
সময় এঅঞ্চলে এর ব্যাপক আবাদ ছিল।
চিনা গাছ, Photo: millets.files.wordpress.com |
একসময়ের কদরহীন ফসলটির
বর্তমানে কদর বেড়েছে। বিশেষ করে শিশুখাদ্য তৈরিতে চিনার ব্যাপক চাহিদা বৃদ্ধি পেয়েছে।
চিনা চাষে খরচ কম এবং ফলন ভালো। চিনা চাষ করতে কোন মৌসুম লাগে না। চিনা চাষ যে কোন
সময় করা যায়। আর সেচ কম লাগায় উৎপাদন খরচও কম। শুধুমাত্র বীজ বোপন করলেই চিনার গাছ
বেড়ে উঠে। মাঝে একবার সামান্য সার প্রয়োগ করতে হয়।
শিশুখাদ্য তৈরি ছাড়াও
চিনা দিয়ে পায়েস রান্না করা যায় তাছাড়া মোয়া, খিচুড়ি ও নানা ধরণের পিঠা ও বিভিন্ন ধরণের
খাবার তৈরি করা যায়।
সূর্যমুখী ফুলের বীজ
সূর্যমুখী ফুলের বীজ, Photo: তোতা মিয়া এগ্রো |
ইংরেজি নামঃ Sunflower Seeds
বৈজ্ঞানিক নামঃ Helianthus annuus
পরিবার: Asteraceae
এখন আমরা যে ফসলটি নিয়ে
জানব সেটিকে এক কথায় অল-রাউন্ডার বলা যেতে পারে। এর গাছের ক্ষেত যেমন দৃষ্টিনন্দন,
যার ফুলের রূপ চোখের শান্তি দান করে, যার ফুলের বীজ মানুষ এবং গবাদি পশুর খাদ্য একই
সাথে ফুলের বীজ থেকে পৃথিবীর অন্যতম সেরা মানের তেল উৎপাদন করে।
সূর্যমুখী একধরনের একবর্ষী
ফুলগাছ। সূর্যমুখী গাছ লম্বায় ৩ মিটার (৯.৮ ফু) হয়ে থাকে, ফুলের ব্যাস ৩০ সেন্টিমিটার
(১২ ইঞ্চি) পর্যন্ত হয়। এই ফুল দেখতে কিছুটা সূর্যের মত এবং সূর্যের দিকে মুখ করে
থাকে বলে এর এরূপ নামকরণ।
ফুল থেকে বীজ সংগ্রহ, Photo: beeandbasil |
এর বীজ হাঁস মুরগির খাদ্যরূপে
ও তেলের উৎস হিসেবে ব্যবহৃত হয়। এই বীজ যন্ত্রে মাড়াই করে তেল বের করা হয় ৷ তেলের
উৎস হিসেবে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে সূর্যমুখীর ব্যাপক চাষ হয়। সমভুমি এলাকায় শীত ও
বসন্তকালে, উঁচু লালমাটি এলাকায় বর্ষাকালে ও সমুদ্রকুলবর্তী এলাকায় শীতকালীন শস্য
হিসাবে চাষ করা হয়। ১৯৭৫ সাল থেকে সূর্যমুখী একটি তেল ফসল হিসেবে বাংলাদেশে আবাদ হচ্ছে।
বর্তমানে রাজশাহী, যশোর, কুষ্টিয়া, নাটোর জেলা, পাবনা, দিনাজপুর, গাজীপুর, টাংগাইল
প্রভৃতি জেলাতে এর ব্যাপক চাষ হচ্ছে।
আন্তর্জাতিক পুষ্টিবিদদের
দেওয়া তথ্যমতে, সূর্যমুখী তেলে আছে মানবদেহের জন্য উপকারী ওমেগা ৯ ও ওমেগা ৬, এছাড়াও
আছে অলিক অ্যাসিড। সূর্যমুখীর তেলে আছে শতকরা ১০০ ভাগ উপকারী ফ্যাট। আরও আছে কার্বোহাইড্রেট,
প্রোটিন ও পানি। সূর্যমুখীর তেল সম্পূর্ণ ক্ষতিকারক কোলেস্টেরলমুক্ত। এতে আছে ভিটামিন
‘ই’, ভিটামিন ‘কে’– এর মতো গুরুত্বপূর্ণ ভিটামিন, আছে মিনারেল। মুখের যত্নে দাঁতের
জন্য উপকারী একমাত্র তেল। হৃদরোগী, ডায়াবেটিসের রোগী, উচ্চ রক্তচাপের রোগী, কিডনি রোগীর
জন্যও সূর্যমুখীর তেল নিরাপদ। চমৎকার এনার্জির উৎসও এর তেল। এককথায় বলা যায়, সূর্যমুখী
বীজের তেল যেমন সুস্বাস্থ্যকর তেমনি পুষ্টিগুণে অন্য সব তেলবীজ থেকে একটু বেশিই পিওর।
সূর্যমুখীর তেল ঘিয়ের
বিকল্প হিসেবে ব্যবহৃত হয়, যা বনস্পতি তেল নামে পরিচিত। এই তেল অন্যান্য রান্নার তেল
হতে ভাল এবং হৃদরোগীদের জন্য বেশ কার্যকর। এতে কোলেস্টেরলের মাত্রা অত্যন্ত কম। এছাড়া
এতে ভিটামিন এ, ডি ও ই রয়েছে।
[1] সূর্যমুখী বীজ এর
আরো কিছু উপকারিতা তুলে ধরা হলোঃ
১। আমাদের দেহের ক্যান্সার
প্রতিরোধ করতে যে কোষ গুলো কাজ করে সূর্যমুখীর বীজ সেই কোষের ক্ষতি নিয়ন্ত্রণে সাহায্য
করে। কারণ সূর্যমুখী বীজে আছে সেলেনিয়াম (কেমিক্যাল) যা ক্যান্সারের শত্রু।
২। সূর্যমুখী বীজ আমাদের
দেহের হাড় সুস্থ রাখে ও মজবুত করে। আমাদের দেহে ক্যালসিয়াম এর সাথে সাথে ম্যাগনেসিয়াম
ও কপার এরও প্রয়োজন আছে আর এই সূর্যমুখী বীজে ম্যাগনেসিয়াম ও কপার উভয়ই আছে। এই বীজ
আমাদের দেহে আরও একটি উপকার করে থাকে তা হল বাতের ব্যথা কারণ এই বীজে আছে ভিটামিন-ই
যা আমাদের দেহের ব্যথা দূর করতে সহায়তা করে।
৩। সূর্যমুখী বীজ আপনার
মনকে শান্ত রাখতে সাহায্য করবে। সূর্যমুখী বীজের ম্যাগনেসিয়াম উপাদান আমাদের মানসিক
চাপ দূর করে, মাইগ্রেনের সমস্যা দূর করে এবং আমাদের মস্তিষ্ককে শান্ত রাখতে সাহায্য
করে।
৪। সূর্যমুখী বীজ আপনার
ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে থাকে। কারণ এতে আছে ভিটামিন-ই যা আমাদের
ত্বককে রক্ষা করে সূর্যের আল্ট্রা-ভায়োলেট রশ্মি থেকে।
৫। সূর্যমুখী বীজ আমাদের
দেহের অনেক রোগ প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে থাকে। যেমন হাড়ের জয়েন্টে ব্যথা, গ্যাস্ট্রিক
আলসার, দেহের চামড়ায় জ্বালা-পোড়া, হাঁপানি ইত্যাদি রোগ সমূহ সারিয়ে তোলে কারণ সূর্যমুখী
বীজে আছে প্রচুর পরিমানে অ্যান্টিঅক্সিডেণ্ট। প্রতিদিন ১/৪ কাপ সূর্যমুখী বীজ আমাদের
হার্ট এর সমস্যা থেকে দূরে রাখে। এই বীজ আমাদের দেহের অপ্রয়োজনীয় কলেস্টরোল দূর করে
আমাদের হার্টকে ভলো রাখে। তাই সুস্থ থাকতে, আপনি প্রতিদিন খেতে পারেন সূর্যমুখী বীজ,
বাদামের মত ভেজে, সালাদ দিয়ে অথবা পাস্তা, স্যান্ডুউইচে।
[1] তথ্য সূত্রঃ
healthdigezt.com
কুসুম ফুলের বীজ
কুসুম ফুলের বীজ, Photo: তোতা মিয়া এগ্রো |
ইংরেজি নামঃ Safflower, False Saffron.
বৈজ্ঞানিক নামঃ Carthamus tinctorius Linn.
পরিবার: Asteraceae
এখন আমরা যে ফসলটি নিয়ে
জানব সেটিও অল-রাউন্ডার এর চেয়ে কম কিছু নয়। আমরা এখন জানব কুসুম ফুল সম্পর্কে। এটিও
সূর্যমুখী ফুলের একই পরিবার ভুক্ত (Asteraceae) উদ্ভিদ। এই গাছের ফুল বেশ আকর্শনীয়।
পাখি পালনকারীরা এই কুসুমফুল কে নিচে থাকে এর বীজের জন্য অর্থাৎ এটির বীজ যে পাখির
জন্য একটি আদর্শ খাবার সেটি জানলেও আমরা অনেকেই জানি না যে, এই গাছের বীজ থেকে বের
উৎকৃষ্ট মানের তেল পাওয়া যায় সেই সাথে এটির খৈল গবাদি পশুর জন্যও আদর্শ খাবার। এর চেয়েও
মজার ব্যাপার এটার ফুল থেকে প্রাকৃতিক রং সংগ্রহ করা হয়।
কুসুম গাছ দুই ধরনের-
একটি বেশ বড় এবং উঁচু, অন্যটি খুবই ছোট ও ঝোপালো ধরনের। মূলত ছোট গাছটির বীজই পাখির
খাবার হিসেবে ব্যবহার হয় এবং এটি থেকেই রং পাওয়া যায়। কুসুম ফুল গ্রীষ্মে ফোটে। এরা
পরিত্যক্ত মাঠ কিংবা ঘাসবনে আপনা আপনিই জন্মে। তাছাড়া কুসুম ফুল নদীর তীরে, পাহাড়ের
ঢালে, কৃষিজমিতে, বসতবাড়িতে এমনকি টবেও লাগানো যায়।
কুসুম ফুলের গাছ, Photo: balconygardenweb.com
এটি খরা সহনশীল উদ্ভিদ।
এই
উদ্ভিদ বীজের মাধ্যমে বংশ বিস্তার করে। এরা বর্ষজীবি উদ্ভিদ এবং এদের উচ্চতা ১-৩ ফুট
লম্বা হতে পারে। কমলা -হলুদ মেশানো ফুলগুলি সাধারনত ১-১.৫ ইঞ্চি পর্যন্ত হয়ে থাকে।
এর কান্ড খাড়া, শাখা -প্রশাখা বিহীন অথবা শাখা -প্রশাখা বিশিষ্ট। কান্ড শক্ত ও অনমনীয়।
কিন্তু পাতা বড় ও নরম। পাতার ধার বরাবর শক্ত কাঁটা থাকে। ফুল ফোটে কান্ড ও শাখার প্রান্তভাগে।
প্রথম দিকে ফুলের বর্ণ লালচে হলুদ হলেও পরবর্তীতে এটি উজ্জ্বল কমলা রূপ ধারন করে।
মূলত বীজের জন্যই কুসুম
ফুলের চাষ করা হয়। এর বীজ খাদ্যদ্রব্য রঙিন ও সুঘ্রাণযুক্ত করতে এবং ঔষধ তৈরিতে ব্যবহৃত
হয়। পৃথিবীর বহুদেশে এটাকে জাফরান নামে বিক্রি করে লোক ঠকানো হয়। স্বয়ং সৌদিআরবেও হজের
মৌসুমে ফুটপাতে বসে ইয়েমেনীরা এই ব্যবসাটি করে থাকে। মসলা হিসেবে এর কোন মূল্য নেই। ফল দেখতে অনেকটা নাশপাতির মত। ফলটি একটি আবরনী দ্বারা
আবৃত থাকে। প্রতিটি ফলে ১৫ -৩০টি বীজ থাকে। বীজ থেকে তেল পাওয়া যায়। তাছাড়া এর বীজ থেকে তেল
ও সংগ্রহ করা হয়।
আমাদের দেশে অনেক আগেকার
সময়ে কুসুম ফুলের বীজ পাটায় বেটে তারপর পানিতে গুলিয়ে ছেঁকে নিয়ে তরকারিতে ব্যবহার
করা হতো। এছাড়া মাথা ঠান্ডা রাখতে এই বীজ বেটে মাথায় পট্টি দেয়া হতো।
প্রাচীনকাল থেকেই অসংখ্য
রোগের চিকিৎসায় কুসুম ফুল ব্যবহার হয়ে আসছে। কুসুম ফুলের বীজ থেকে উৎপন্ন তেল বিভিন্ন রোগের
চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়। এই তেল দিয়ে বানানো ঔষধ - কোষ্ঠ কাঠিন্য নিবারক, হজমশক্তি বৃদ্ধিকারক,
শ্লেষ্মা পরিষ্কারক হিসেবে কাজ করে। চীনদেশে নিউমোনিয়া ও পাকস্থলির টিউমারসহ বিভিন্ন
ক্ষতের চিকিৎসায় কুসুম ফুলের তেল ব্যবহার করা
হয়। ভারতীয় আয়ুবের্দীয় চিকিৎসায়ও কুসুম ফুলের ব্যবহার রয়েছে। খোস পাঁচড়া, বাতের ব্যথা
ও বুকের ব্যথায় এটি ভাল কাজ করে। এছাড়া চায়ের সঙ্গে সামান্য পরিমান কুসুম ফুল মিশিয়ে
পান করলে কাশি ও ফুসফুসের জটিলতা কমে।
কের্থামিন ও কের্থামোন
– কুসুম ফুলে উপরোক্ত পদার্থ দুটির উপস্থিতির কারনে এটি থেকে আমরা উজ্জ্বল কমলা রঙ
পেয়ে থাকি। কাপড় রঞ্জনের ক্ষেত্রে কুসুম ফুলের রয়েছে এক ঐতিহাসিক পটভূমি। প্রায় ৩৫০০
বছর পূর্ব হতে কাপড় রাঙানোর জন্য মিশরে কুসুম ফুলের চাষ শুরু হয়।
কুসুম ফুল থেকে পাওয়া ভেষজ রং, Photo: blog.ellistextiles.com |
আমাদের ঢাকার কুসুম ফুলের
রঙ-ই তখন ছিল বিশ্বসেরা। এমনকি ইংরেজ আমলেও এর বেশ কদর ছিল। কিন্তু কৃত্রিম রঙ আবিষ্কারের
পর থেকে এদেশে কুসুম ফুলের চাষ একপ্রকার বন্ধই
হয়ে যায়। বতর্মানে ভেজিটেবল ডাইং -এর জনপ্রিয়তার কারনে এটি হয়তো তার হারানো গৌরব ফিরে
পেতে পাচ্ছে! অনেকের চাহিদার জন্য কৃষক চাষ
করছেন কিছু কিছু।
বায়োফ্ল্যাভনয়েডঃ কুসুম
ফুলে এটি এন্টি - অক্সিডেন্ট হিসেবে কাজ করে এবং অন্যান্য এন্টি - অক্সিডেন্ট গুলিকে
ক্যান্সার সৃষ্টিকারী ফ্রি-রেডিকেলের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে সাহায্য করে। এছাড়া এই বায়োফ্ল্যাভনয়েড
ক্যান্সার, হৃদরোগ সহ অকাল বার্ধ্যক্য প্রতিরোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তাছাড়া এই ফুলের ক্যারোটিনয়ড ও
এন্টি-অক্সিডেন্টের কাজ করে এবং শরীরে ক্যান্সার সৃষ্টিকারী ফ্রি-রেডিকেলদের সম্পূর্ণ
রূপে ধ্বংস করে দেয়।
ফ্যাটি এসিডঃ কুসুম ফুলের
বীজে রয়েছে ৩৫%-৪৫% তেল। আর এই তেলে রয়েছে
আমাদের শরীরের জন্য অতি প্রয়োজনীয় ফ্যাটি এসিড। এতে ওমেগা-৩ এবং ওমেগা-৬ ফ্যাটি এসিডের
ভারসাম্যতা রয়েছে। ফলে ডায়াবেটিস, আলঝেইমার্স, পারকিনসন্স, হাড়ক্ষয় ইত্যাদি রোগ প্রতিরোধে
এই তেল গুরুত্বপূর্ন ভূমিকা পালন করে। শিশুর বৃদ্ধি ও মানসিক বিকাশে এই তেলের গুরুত্ব
অপরিসীম।
গরম পানিতে কুসুম ফুলের
নির্যাস শরীর থেকে ঘাম নির্গত করে বলে ঠান্ডাজনিত রোগে ব্যবহৃত হয়। শিশু জন্মের পর
এর বীজের পাউডার একটা কাপড়ে নিয়ে গরম করে সেঁক দিলে ব্যথা উপশম হয়। এর ফুল আবার
জন্ডিসের জন্য উপকারী। বর্তমানে জিন প্রযুক্তির মাধ্যমে বিশেষ প্রজাতির কুসুম ফুলের
জাত উদ্ভাবন করা হয়েছে যার থেকে ডায়াবেটিসের মহৌষধ ইনসুলিন উৎপাদন করা হবে।
চলমান...
তথ্য সূত্র_________
উইকিপিডিয়া
বিভিন্ন বই, প্রবন্ধ, পত্রিকা থেকে সংগ্রহ
Post a Comment